বাজিয়ে বাঁশি বংশীবালক জোটায় নিজের পড়ার খরচ

ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে যেতে সুদৃশ্য ওভারব্রিজটা পার হতেই কানে আসে মন মাতানো বাঁশির সুর। ঘুরে তাকাতেই দেখা গেল এক ক্ষুদে বংশীবাদক বিভিন্ন গানের কথা বাঁশির সুরে ফুটিয়ে মাতোয়ারা করছেন পথচারীদের।

পাশেই ছোট বড় বাঁশির পসরা। মুগ্ধ দর্শক-শ্রোতাদের কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা বানাচ্ছেন ভিডিও। বালকের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই, কথা বলতে মন নেই; তার যত ধ্যান জ্ঞান বাঁশিতেই। নিথুয়া পাথারে নেমেছি বন্ধুরে…… কিংবা গাড়ি চলে না চলে না…… কিংবা পত্রলেখা প্রেমে- নানা গানের সুর নিজ বাঁশিতে তুলছে বংশী বালক।

কষ্টসাধ্য আলাপে নাম জানা গেল, শাহাদাত মিয়া। স্কুলে পরিচিতি ‘বংশীবালক’ নামেই। মাত্র আট বছর বয়সেই এলাকায় তার বাঁশির সুর ছড়িয়ে পড়েছে। রায়েরবাজারের জাফরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর এই শিক্ষার্থী বাঁশি বাজিয়ে নিজের পড়াশুনার খরচ চালান, সংসার চালাতেও সাহায্য করেন বাবাকে।

10বংশীবালক শাহাদাতের গল্প শোনাচ্ছিলেন বাবা রাজু মিয়া। তিনি নিজেও একজন বংশীবাদক। দুজনেই রাস্তায় রাস্তায় বাঁশি বিক্রি করেন। রজব বলেন, “ছোটবেলায থেকেই ওর খুব আগ্রহ ছিল বাঁশিতে। প্রথম প্রথম পারত না, এখন বেশ ভাল বাজায়। সবাই প্রশংসা করে। সঙ্গে নিয়েই বের হই ওর স্কুল না থাকলে। সকালে স্কুলে যায়। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত একসঙ্গে বাঁশি বিক্রি করি।”

সেসব বাঁশির মূল্য পঞ্চাশ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। নবীনবরণ, পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান, পয়লা বৈশাখ, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন দিবসের যেকোনো আয়োজনে শাহাদাত আমন্ত্রণ পেলে বাঁশি বাজায়। আর ওই অনুষ্ঠানগুলোতে আয়োজকের পাশাপাশি বাঁশির সুরে বাঁধেন অতিথিদের। নিজের স্কুল ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাঁশি হাতে হরহামেশাই দেখা মেলে শাহদাতের।

এই অল্প বয়সেই খ্যাতির অভিজ্ঞতা হয়েছে। এমন এক দিনের অভিজ্ঞতা শোনাল সে, “এক হোটেলে খ্যায়ে টাকা দিতে গ্যাছি। লোকটা বিল নিবে না। কয়, আমাগো এক অনুষ্ঠানে ভাল্লাগছে তাই ন্যাবে না!” কথাটা বলেই হাসি দেয় শাহাদাত। নিজের স্বপ্নের কথা জানায় সে, ‘শিক্ষক হতে চাই।’ আর বাঁশি? শাহাদাতের জটিল উত্তর, ‘প্রেম কি ছাড়া যায়? বাঁশিই আমার প্রেম!’

বংশীবালকের কথাশুনে শ্রোতা দর্শকদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যায়। সূর্য ডুব মেরেছে প্রায়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। শাহাদাত ও রাজু মিয়া উঠে পড়েন। হাত বাড়িয়ে দেন, ‘গেলাম ভাই, অন্যদিকে যাইতে হইবো। আ্যারেকদিন আলাপ হইবো।” বলেই বাঁশির পসরা তুলে হাটা দেন রাজু। পেছন পেছন ক্ষুদে পায়ে সাথ মেলায় বংশীবালক।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর